আল্লাহ বহু সংখ্যক জ্বীন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছেন । আল্লাহ যাকে হিদায়াত করেন সেই হিদায়াত লাভ করে, আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তারাই হয় ক্ষতিগ্রস্ত।

Jahannam Fire / www.ibsbangla.xyz
Jahannam Fire 
নিচে আল-কোরআন থেকে ২ টি আয়াতের তাফসীর নেয়া হয়েছে। এ আয়াত ২টি থেকে আমাদের সবার অনেক কিছু শেখার আছেঃ

আল্লাহ যাকে হিদায়াত করেন সেই হিদায়াত লাভ করে, আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তারাই হয় ক্ষতিগ্রস্ত।
(সূরা আরাফঃ- ১৭৮)

আমি বহু সংখ্যক জ্বীন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না, তারা জন্তু-জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারা একেবারে বে-খবর।
(সূরা আরাফঃ- ১৭৯)

১৭৮-১৭৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা‘আলা যাকে হিদায়াত দান করেন সে-ই হিদায়াত প্রাপ্ত আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন হিদায়াতকারী নেই। পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত। অতএব আল্লাহ তা‘আলা যদি হিদায়াত না দেন তাহলে কোন পীর ওলী আওলীয়া, মুরশিদ, গাউস, কুতুব, বাবা ইত্যাদি হিদায়াত দিতে পারে না। স্বয়ং রাসূলই পারেন না আর কোথায় এসব ব্যক্তিরা! আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (إِنَّكَ لَا تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَا۬ءُ ج وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ)‏ “তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ তা‘আলাই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎ পথ অনুসারীদের সম্পর্কে।”
(সূরা কাসাস ২৮:৫৬) আল্লাহ তা‘আলা অনেক জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জাহান্নামের জন্য। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি বাধ্য করে তাদেরকে জাহান্নামে দেবেন। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা যখন সৃষ্টি করেন তখনই তিনি জানেন এরা দুনিয়াতে জাহান্নামের আমল করবে। এটাই আল্লাহ তা‘আলা পঞ্চাশ হাজার পূর্বে তাকদীরের খাতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা আকাশমণ্ডলী ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি জীবের তাকদীর নির্ধারণ করে রেখেছেন। তখন তাঁর আরশ পানির ওপর ছিল। (অর্থাৎ সাত আকাশের ওপর যে সাগর রয়েছে তার ওপর আল্লাহ তা‘আলার আরশ)।
(আবূ দাঊদ হা: ২১১৮, নাসাঈ হা: ১৪০২, ইবনু মাযাহ হা: ১৮৮২, সহীহ) (لَهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِهَا) ‘তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না’ অর্থাৎ এসব অঙ্গ-প্রতঙ্গ থাকা সত্ত্বেও তারা তার দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (وَلَقَدْ مَکَّنّٰھُمْ فِیْمَآ اِنْ مَّکَّنّٰکُمْ فِیْھِ وَجَعَلْنَا لَھُمْ سَمْعًا وَّاَبْصَارًا وَّاَفْئِدَةًﺘ فَمَآ اَغْنٰی عَنْھُمْ سَمْعُھُمْ وَلَآ اَبْصَارُھُمْ وَلَآ اَفْئِدَتُھُمْ مِّنْ شَیْءٍ اِذْ کَانُوْا یَجْحَدُوْنَﺫ بِاٰیٰتِ اللہِ وَحَاقَ بِھِمْ مَّا کَانُوْا بِھ۪ یَسْتَھْزِءُوْنَﭩﺟ)‏ “আমি তাদেরকে এমন সব কিছু দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দিইনি। আমি তাদেরকে কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছিলাম; কিন্তু তাদের কান, চোখ ও হৃদয় তাদের কোনো কাজে আসল না। কারণ, তারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করেছিল। যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করত তা-ই তাদেরকে ঘিরে ফেলল।”
(সূরা আহকাফ ৪৬:২৬) তারা কেবল হিদায়াতের ক্ষেত্রে বধির, অন্ধ ও বোবা। তারা দেখে না বা শুনে না তা। নয় যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (أَفَلَمْ يَسِيْرُوْا فِي الْأَرْضِ فَتَكُوْنَ لَهُمْ قُلُوْبٌ يَّعْقِلُوْنَ بِهَآ أَوْ اٰذَانٌ يَّسْمَعُوْنَ بِهَا ج فَإِنَّهَا لَا تَعْمَي الْأَبْصَارُ وَلٰكِنْ تَعْمَي الْقُلُوْبُ الَّتِيْ فِي الصُّدُوْرِ)‏ “তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্র“তিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।” (সূরা হজ্জ ২২:৪৬) (أُولٰ۬ئِكَ كَالْأَنْعَامِ) ‘তারাই পশুর ন্যায়’ অর্থাৎ এসকল পথভ্রষ্ট কাফিররা চতুষ্পদ জন্তু বরং তার চেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট। কেননা চতুষ্পদ জন্তু তার জন্য কোনটা কল্যাণ আর কোন্টা ক্ষতিকর সব দেখতে পায় এবং রাখালের অনুসরণ করে চলে আর এসব কাফিররা এ সকল চতুষ্পদ জন্তুর বিপরীত। ভাল-মন্দ কিছুই বুঝার চেষ্টা করে না এবং কুরআনের গাইড লাইন অনুসরণ করে না। তাই সকল মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত নয়। কেবল মু’মিন মুসলিমরাই আশরাফুল মাখলুকাত। কারণ যারা কাফির তাদেরকে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা চতুষ্পদ জন্তু বলছেন। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। ২. জাহান্নামের হকদাররাই জাহান্নামে যাবে। ৩. তাকদীরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। ৪. কাফিররা চতুষ্পদ জন্তুর মত কাণ্ডজ্ঞানহীন।

আমাদের আরো পোষ্ট পড়ুনঃ 

Comments

Popular posts from this blog

সূরা আল কাউসার এর ফজিলত , শানে নুযুল , নামকরণ ও তাফসীর এবং শিক্ষা জেনে নিন

সূরা ইখলাসের নামকরণ, শানে নুযুল ও তাফসীর জেনে নিন | একজন সত্যিকার মা‘বূদের চারটি বৈশিষ্ট্য

সূরা আল মাউন এর নামকরণ ও তাফসীর এবং শিক্ষণীয় বিষয় জেনে নিন