সূরা ইখলাসের নামকরণ, শানে নুযুল ও তাফসীর জেনে নিন | একজন সত্যিকার মা‘বূদের চারটি বৈশিষ্ট্য
প্রথম বৈশিষ্ট্য: যে মা‘বূদের ইবাদত করা হবে তার প্রথম বৈশিষ্ট্য হবে তিনি একক হবেন তার কোন অংশীদার থাকবে না। এ বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন কিছুর নেই। তাই এখানে আল্লাহ তা‘আলা أَحَد শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার কোন দ্বিবচন বা বহুবচন হয় না। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যার ইবাদত করা হয় সবই মানুষের বানানো ও মস্তিস্কপ্রসূত চিন্তা-চেতনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِھ۪ٓ اِلَّآ اَسْمَا۬ئً سَمَّیْتُمُوْھَآ اَنْتُمْ وَاٰبَا۬ؤُکُمْ مَّآ اَنْزَلَ اللہُ بِھَا مِنْ سُلْطٰنٍﺚ اِنِ الْحُکْمُ اِلَّا لِلہِﺚ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْٓا اِلَّآ اِیَّاھُﺚ ذٰلِکَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَلٰکِنَّ اَکْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ) ‘‘তাঁকে (আল্লাহকে) ছেড়ে তোমরা কেবল কতকগুলো নামের ‘ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ; এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এটাই সঠিক দীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।’’ (সূরা ইউসুফ ১২: ৪০) এ থেকে আরো পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার শানে উপযোগী নয় এমন নামে তাঁকে অভিহিত করা যাবে না, বরং আল্লাহ তা‘আলাকে একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত নামেই অভিহিত করতে হবে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: الصَّمَدُ অর্থাৎ যে মা‘বূদের ইবাদত করা হবে তিনি কোন কিছুর মুখাপেক্ষী হবেন না। তিনি কোন খাবার, পানীয় ও নিজ প্রয়োজন পূরণের জন্য অন্যের সহযোগিতা গ্রহণ হতে মুক্ত হবেন। মোট কথা যিনি নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই এ আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদসহ অনেক মুফাসসির বলেছেন : الصَّمَدُ সামাদ হলেন তিনি যার মাঝে কোন শূন্যতা নেই। (ইবনু জারীর /২২২) এ বৈশিষ্ট্যটিও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে, তাই তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার হকদার। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: (لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ) একজন সত্যিকার মা‘বূদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি কাউকে জন্ম দেন না। অর্থাৎ তার কোন স্ত্রী-সন্তান নেই। এটাও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন : (بَدِيْعُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ط أَنّٰي يَكُوْنُ لَه۫ وَلَدٌ وَّلَمْ تَكُنْ لَّه۫ صَاحِبَةٌ ط وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ ج وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ) “তিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, তাঁর সন্তান হবে কিরূপে? অথচ তাঁর তো কোন স্ত্রী নেই। তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত।” (সূরা আন‘আম ৬: ১০১) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدًاﮧﺚ لَقَدْ جِئْتُمْ شَیْئًا اِدًّاﮨﺫ تَکَادُ السَّمٰوٰتُ یَتَفَطَّرْنَ مِنْھُ وَتَنْشَقُّ الْاَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ ھَدًّاﮩﺫ اَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمٰنِ وَلَدًاﮪﺆ وَمَا یَنْۭبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًاﮫﺚ اِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّآ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًاﮬﺚ) “তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তোমরা এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করেছ; যাতে আকাশসমূহ বিদীর্ণ হবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়! আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।” (সূরা মারইয়াম ১৯: ৮৮-৯৩) মূলত: কথা হচ্ছে যে, একজন সত্যিকার মা‘বূদকে কেউ জন্ম দিতে পারে না এবং বানাতেও পারে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আদম সন্তান আমাকে অবিশ্বাস করে অথচ এটা তার জন্য সমীচীন নয়। সে আমাকে গালি দেয় অথচ এটাও তার জন্য সমীচীন নয়। আমাকে অবিশ্বাস করার অর্থ হলো সে বলে : আমাকে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় সৃষ্টি করতে পারবেন না। যেমন আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করার চেয়ে কি অধিক সহজ নয়? আর আমাকে গালি দেয়ার অর্থ হলো : সে বলে : আমার নাকি সন্তান আছে, অথচ আমি একক, অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী, আমার কোন সন্তান নেই, আমাকে কেউ জন্ম দেয়নি এবং আমার সমকক্ষ ও সমতুল্য কেউ নেই। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৭৪, সহীহ মুসলিম হা. ২০৭৮) চতুর্থ বৈশিষ্ট্য: একজন সত্যিকার মা‘বূদের সত্ত্বা, গুণাবলী ও কাজকর্ম অন্য কোনো কিছুরই সমতুল্য ও সমকক্ষ হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ج وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ) “কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। (সূরা শুরা ৪২: ১১) এ চারটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে, তাই আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র সমস্ত মাখলুকের ইবাদত পাওয়ার যোগ্য; অন্য কোন মূর্তি, দেব-দেবী ইত্যাদি নয়। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. সূরার ফযীলত অনেক। যেমন : নেকীর দিক দিয়ে এ সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। ২. যারা প্রকৃতপক্ষে এ সূরাকে ভালবেসে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে ও তাঁর ওপর ভরসা রাখবে আল্লাহ তা‘আলাও তাঁকে ভালবেসে জান্নাত দেবেন। ৩. একজন সত্যিকার মা‘বূদের চারটি বৈশিষ্ট্য যা অত্র সূরায় উল্লেখিত হয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলাই সকল ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। কারণ উপরোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য কেবল তাঁর মাঝেই আছে।
জাযাকাল্লাহ খাইরান
ReplyDeleteআল্লাহু আকবার
ReplyDeleteজাঝাকাল্লাহ
ReplyDeleteমাশা আল্লাহ
ReplyDeleteJazakallahu khairan
ReplyDeleteজাজাকাল্লাহু খাইরান
ReplyDeleteজাজাকাল্লাহখাইরান
ReplyDelete